রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস, রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি,রোজার আয়াত ও হাদিস, রোজা সম্পর্কে হাদিস, রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব, রোজা সম্পর্কে ছোট হাদিস, রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত, সাওম সম্পর্কে প্রতিবেদন, ৩০ রোজার ফজিলত দলিল সহ।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন, নফসকে নিয়ন্ত্রণ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম। রমজানের রোজা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অনেক ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে রোজার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১
রোজা একটি বিশেষ ইবাদত যা সরাসরি আল্লাহর জন্য পালন করা হয়। অন্য সব ইবাদতের প্রতিদান নির্দিষ্ট থাকলেও রোজার প্রতিদান সরাসরি আল্লাহ নিজে দেন।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন:
“রোজা আমার জন্য, এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
এর মানে হলো, রোজাদারের ধৈর্য, ত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি তার ভালোবাসা ও আনুগত্য আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে মূল্যবান।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ২
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন এটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
(সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩)
রোজার মাধ্যমে একজন মানুষ তার নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে। দিনের বেলায় খাদ্য, পানীয় এবং প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকার ফলে তার ভেতরে আল্লাহভীতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৩
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা রয়েছে। কিয়ামতের দিন এই দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। রোজাদারদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)
এটি রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৪
রোজা রাখা অতীতের গুনাহ মাফের কারণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
(সহীহ বুখারি: ৩৮, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)
এ হাদিসে বোঝা যায়, সঠিক নিয়তে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখলে আল্লাহ বান্দার সব ছোট গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৫
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।”
(সহীহ বুখারি: ২৮৪০, সহীহ মুসলিম: ১১৫৩)
এ হাদিসে রোজার বিশেষ ফজিলত ও রোজাদারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া এবং ক্ষমার ইঙ্গিত রয়েছে।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৬
রোজা মানুষের জন্য নফসের বিরুদ্ধে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রোজা একটি ঢাল। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে কেউ রোজা রাখলে সে অশ্লীল কথাবার্তা বলবে না এবং ঝগড়াও করবে না। যদি কেউ তাকে গালাগালি করে বা তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়, তবে সে বলবে, ‘আমি রোজাদার।’”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
এটি রোজাদারের নৈতিক চরিত্র গঠনে এবং ধৈর্য ধারণে সাহায্য করে।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৭
রোজা একজন মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায়। দিনে দীর্ঘ সময় খাদ্য, পানীয় এবং প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজেকে সংযত রাখতে সক্ষম হয়। এই সংযম ও ধৈর্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৮
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দের সময় রয়েছে: একটি হলো ইফতারের সময় এবং আরেকটি হলো, যখন সে তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।”
(সহীহ বুখারি: ১৮০৫, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
ইফতারের সময় ক্ষুধা ও পিপাসার কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ দান।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ৯
রোজা একজন মুমিনকে পরকালের কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে। এটি মানুষের আত্মশুদ্ধি ঘটায় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১০
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি রোজা রাখে এবং পাপ কাজ ও মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকে না, আল্লাহ তার খাওয়া ও পান করা ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন দেখেন না।”
(সহীহ বুখারি: ১৯০৩)
রোজা মানুষের আত্মশুদ্ধি ঘটায় এবং তাকে পাপ থেকে বিরত রাখতে সহায়ক হয়। এটি আল্লাহর প্রতি একজন মুমিনের আনুগত্য ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১১
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তিন ধরনের ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: (১) রোজাদারের দোয়া, যখন সে ইফতার করে। (২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। (৩) মজলুমের দোয়া।”
(তিরমিজি: ২৫২৮)
রোজাদার যখন ইফতারের আগে বা পরে দোয়া করে, আল্লাহ তার সেই দোয়া কবুল করেন।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১২
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৯, সহীহ মুসলিম: ১০৭৯)
রোজার সময় শয়তানের প্রভাব কম থাকে, ফলে মানুষ সহজেই আল্লাহর ইবাদতের প্রতি মনোযোগ দিতে পারে।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১৩
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“তোমাদের যদি বুঝার ক্ষমতা থাকে, তবে তোমরা রোজা রাখবে; এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর।”
(সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৪)
রোজার মাধ্যমে শরীর শুদ্ধ হয়, পেটের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায় এবং আত্মিক উন্নতি ঘটে। এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও উপকারী।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১৪
হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে:
“রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল ইবাদত করে, তার জন্য একটি ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি একটি ফরজ ইবাদত করে, তাকে সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব দেওয়া হয়।”
(বায়হাকি: শু'আবুল ঈমান)
রমজান মাসে রোজার সঙ্গে অন্যান্য ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের বড় সুযোগ রয়েছে।
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১৫
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“কিয়ামতের দিন রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে: হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া ও প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি; তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে: আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি; তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। সুতরাং তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।”
(মুসনাদ আহমদ: ৬৬২৬)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১৬
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি রোজা রাখে এবং নামাজ কায়েম করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।”
(তিরমিজি: ৬১৫)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ১৭
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“রোজাদারের জন্য আমি জান্নাতে এমন পুরস্কার রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শোনেনি এবং কোনো হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনি।”
(সহীহ মুসলিম: ১১৫২)
আরো পড়ুন : ২০২৫ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে বাংলাদেশ
আরবি:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ، قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِلَّا الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي».
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আদম সন্তানের প্রতিটি কাজের জন্য দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে আল্লাহ বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য, এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। কারণ বান্দা আমার জন্য তার প্রবৃত্তি ও খাদ্য ত্যাগ করে।’”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি ২
আরবি:
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ، لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ.
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা রয়েছে। কিয়ামতের দিন রোজাদাররা এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের ডেকে বলা হবে, ‘কোথায় রোজাদাররা?’ তারা দাঁড়াবে, এবং এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি ৩
আরবি:
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
(সহীহ বুখারি: ৩৮, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি ৪
আরবি:
الصِّيَامُ جُنَّةٌ.
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “রোজা হলো ঢাল।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
আরো পড়ুন : রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি | মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি ৫
আরবি:
لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ.
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ রয়েছে: একটি হলো ইফতারের সময় এবং আরেকটি হলো তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।”
(সহীহ বুখারি: ১৮০৫, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি ৬
আরবি:
مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا.
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।”
(সহীহ বুখারি: ২৮৪০, সহীহ মুসলিম: ১১৫৩)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি ৭
আরবি:
الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
বাংলা অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “রোজা এবং কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।”
(মুসনাদে আহমদ: ৬৬২৬)
এসব হাদিস রোজার ফজিলত, উপকারিতা এবং রোজাদারের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ সম্পর্কে আমাদের জানায়। রোজা শুধু আল্লাহর ইবাদত নয়, এটি আমাদের নৈতিক উন্নতি, আত্মশুদ্ধি এবং জান্নাত লাভের একটি উপায়।
রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
রোজা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে সূরা আল-বাকারা (২:১৮৩-১৮৫) উল্লেখযোগ্য। নিচে এই আয়াতসমূহ আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ প্রদান করা হলো:
রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
আরবি:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.
বাংলা উচ্চারণ:
"ইয়া আইয়ুহাল্লাযিনা আমানু, কুতিবা আলাইকমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাযিনা মিং কাবলিকুম লা’আল্লাকুম তাত্তাকুন।"
বাংলা অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন এটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
রোজার সময়কাল সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
আরবি:
أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ.
বাংলা উচ্চারণ:
"আইয়ামাম মা’দুদাত, ফামান কানামিনকুম মারিদান আও আলা সফারিন ফা’ইদ্দাতুম মিন আইয়ামিন উখার। ওয়ালাল্লাযিনা ইউতীকুনাহু ফিদয়াতু তা’আমু মিসকীন। ফামান তাতাওয়া খাইরান ফাহুয়া খাইরুল্লাহু। ওয়া আন তাসূমু খাইরুল্লাকুম ইন কুন্তুম তা’লামুন।"
বাংলা অর্থ:
“এগুলো নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে, সে অন্য দিনগুলোতে এর পরিবর্তে রোজা পূরণ করবে। আর যারা রোজা রাখতে সক্ষম নয়, তাদের জন্য ফিদিয়া হলো একজন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। আর যে ব্যক্তি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নেক কাজ করে, তা তার জন্য ভালো। আর যদি তোমরা রোজা রাখো, তবে তা তোমাদের জন্য আরও ভালো, যদি তোমরা জানতে।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)
রমজান মাসে রোজা ফরজ হওয়ার কারণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
আরবি:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ.
বাংলা উচ্চারণ:
"শাহরু রমাদানাল্লাযি উনজিলা ফিহিল কুরআনু হুদাল্লিন নাসি ওয়া বাই্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান। ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফালইয়াসুমহু। ওয়ামান কানামারিদান আও আলা সফারিন ফা’ইদ্দাতুম মিন আইয়ামিন উখার। ইউরিদুল্লাহু বিকুমুল ইয়ুসর, ওয়ালা ইউরিদু বিকুমুল উস্রা। ওয়ালিতুকমিলুল ইদ্দাতা ওয়ালিতুকাব্বিরুল্লাহা আ’লা মা হাদাকুম ওয়া লা’আল্লাকুম তাশকুরুন।"
বাংলা অর্থ:
“রমজান হলো সেই মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশ, স্পষ্ট জ্ঞান এবং সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটি পাবে, সে এই মাসের রোজা রাখবে। আর যে অসুস্থ বা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনে রোজা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান, কঠোরতা চান না। যাতে তোমরা নির্ধারিত দিনগুলো পূর্ণ করতে পারো এবং যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, তোমাদের হিদায়াত দানের জন্য, আর তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
৩০ রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করা হয়েছে। রমজান মাসে ৩০ দিন বা পুরো মাসের রোজা পালন করা আল্লাহর নির্দেশ এবং এটি ঈমান ও তাকওয়ার প্রমাণ। নিচে দলিলসহ ৩০ রোজার ফজিলত বর্ণনা করা হলো:
পুরো মাসের রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশ (কুরআন থেকে)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
আরবি:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ.
বাংলা অর্থ:
“রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, সঠিক নির্দেশনা এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে পুরো রমজান মাসে রোজা রাখা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ।
রমজানের রোজা পূর্ণ করলে গুনাহ ক্ষমা হয় (হাদিস থেকে)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ."
বাংলা অর্থ:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”
(সহীহ বুখারি: ৩৮, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)
তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্য
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
আরবি:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.
বাংলা অর্থ:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন এটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
৩০ দিন রোজা পালনের মাধ্যমে মুমিনের হৃদয়ে তাকওয়া বৃদ্ধি পায়, যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম প্রধান উপায়।
পুরো রমজান রোজা রাখলে জান্নাতে বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ."
বাংলা অর্থ:
“জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা রয়েছে। কিয়ামতের দিন রোজাদাররা এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)
রোজা এবং তাকওয়া আল্লাহর নৈকট্য বাড়ায়
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"الصِّيَامُ جُنَّةٌ."
বাংলা অর্থ:
“রোজা হলো ঢাল।”
(সহীহ বুখারি: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম: ১১৫১)
এটি ইঙ্গিত করে যে রোজা মানুষকে গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং তাকওয়া অর্জনে সহায়ক হয়।
রমজানের শেষ দশকের ফজিলত
রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
আরবি:
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ.
বাংলা অর্থ:
“লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”
(সূরা আল-কদর: ৩)
পুরো ৩০ দিন রোজা পালন করলে এই বরকতময় রাত অর্জনের সম্ভাবনা থাকে।
গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا."
বাংলা অর্থ:
“যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।”
(সহীহ বুখারি: ২৮৪০, সহীহ মুসলিম: ১১৫৩)
উপসংহার
রোজা শুধু একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়; এটি আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা, আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম, এবং তাকওয়া অর্জনের পথ। দুনিয়া ও আখিরাতে এর ফজিলত অসীম এবং আল্লাহ রোজাদারদের জন্য জান্নাতের বিশেষ মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজা রাখার এবং এর ফজিলত লাভ করার তৌফিক দিন। আমিন।