জুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর আসল পরিচয় ২৬০০ বছর পুরোনো ইতিহাস
জুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর আসল পরিচয় ২৬০০ বছর পুরোনো ইতিহাস

জুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর আসল পরিচয় ২৬০০ বছর পুরোনো ইতিহাস
Introduction: ইসলামিক ইতিহাসে জুলকারনাইন (আলাইহি সালাম) এবং ইয়াজুজ মাজুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। কোরআনে তাদের নাম উল্লেখিত হয়েছে এবং তাদের নিয়ে অনেক রহস্য ও গল্প প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে, তাদের মধ্যে সম্পর্কিত ঘটনাগুলি পৃথিবীর ইতিহাসে বহু বছর আগে ঘটেছিল। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো জুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর আসল পরিচয় এবং তাদের ইতিহাস, যা প্রায় ২৬০০ বছর পুরনো।
জুলকারনাইন এর পরিচয়
জুলকারনাইন বা "দুই শিঙওয়ালা" নামটি কোরআনে সুরা আল-খাফের (১৮: ৮৩-১০৪) আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মহান ব্যক্তির নাম তৎকালীন সময়ে পৃথিবীজুড়ে অত্যন্ত সম্মানিত ছিল। ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি একজন বড় শাসক এবং আল্লাহর নির্দেশে ইয়াজুজ মাজুজের মতো দুর্ধর্ষ জাতি থেকে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাঁধ তৈরি করেছিলেন।
ইয়াজুজ মাজুজ
ইয়াজুজ মাজুজ (Gog and Magog) একটি দুষ্ট জাতি যা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কোরআন ও হাদিসে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। ইসলামের পূর্ববর্তী যুগে তারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তাদের অগ্নিশর্মা আচরণে পৃথিবীকে হুমকির মুখে ফেলে।
জুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর মধ্যে সম্পর্ক
কোরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, যখন জুলকারনাইন ইয়াজুজ মাজুজ জাতির কাছে পৌঁছেছিলেন, তারা তাকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ইয়াজুজ মাজুজের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনি বিশাল একটি দেয়াল বা বাঁধ নির্মাণ করেন, যা তাদের আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এই বাঁধটি এক সময় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে এটি আবার খুলে যাবে বলে কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে।
ইয়াজুজ মাজুজ এর কাহিনী - ২৬০০ বছর পুরনো ইতিহাস
ইতিহাসের এই দুর্লভ ঘটনা প্রায় ২৬০০ বছর আগের। তবে, এটি শুধু ধর্মীয় ইতিহাসের একটি অংশ নয়, এটি মানব সভ্যতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। জুলকারনাইনের সময়কার নির্মিত বাঁধ এবং ইয়াজুজ মাজুজের সম্পর্ক আজও বিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টিকারী বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্য
বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায়, কিছু বিজ্ঞানী এবং ঐতিহাসিকদের ধারণা রয়েছে যে, জুলকারনাইন যে বাঁধ তৈরি করেছিলেন তা সম্ভবত আজকের মধ্য এশিয়া, কিংবা উত্তর-পূর্ব তুরস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। যদিও এর সঠিক অবস্থান এখনও বিতর্কিত, তবে এই গবেষণাগুলি কিছু অমূলক এবং সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রদানের প্রচেষ্টা হিসেবে পরিগণিত।
সুরা কাহফের ৭৫-১১০নং আয়াত, সুরা মারইয়াম ও সুরা ত্বাহা তেলাওয়াত করা হবে আজ। আজকের তারাবিহতে হজরত মুসা ও খিজির আলাইহিস সালামের সুন্দর ঘটনার বর্ণনা পড়া হবে। বাদশাহ যুলকারনাইনের পরিচয় ও ক্ষমতার পাশাপাশি ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় ও আগমন এবং সে সময়ের অবস্থার বর্ণনা পড়া হবে আজ। সেখানে জানা যাবে কেয়ামত কাদের উপর পতিত হবে। এসব ঘটনার ধারাবাহিক বর্ণনায় শেষ হবে আজকের তারাবিহ।
সুরা কাহফে আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ জ্ঞানী ব্যক্তির কথা বর্ণনা করেছেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে সে ব্যক্তির কাছে যাওয়ার কথে বলেছিলেন জ্ঞানের নিগুঢ় রহস্য ও বিচক্ষণতা জানা জন্য। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে এ ব্যক্তির নাম 'খাদর' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার অর্থ হলো 'সবুজ-শ্যামল'। অর্থাৎ তিনি যেখানে বসতেন, সে স্থানই সবুজ শ্যামল হয়ে যেতো। কেউ কেউ ওনাকে আল্লাহর ওলি আবার কেউ তাকে আল্লাহর নবি হজরত খিজির আলাইহিস সালাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে জ্ঞানের বিশালতা দেখতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম হজরত খিজির আলাইহিস সালামের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। তিনি মুসা আলাইহিস সালামকে বলেছিলেন, আপনি কোনো কাজে প্রশ্ন করবেন না। কিন্তু যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখনই মুসা আলাইহিস সালাম সে সম্পর্কে প্রশ্ন বা মন্তব্য করেন। এভাবে দ্বিতীয় ঘটনায় তিনি প্রশ্ন করার পরই তিনি (হজরত খিজির) বললেন-
قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکَ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا
তিনি বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না।' (সুরা কাহফ: আয়াত ৭৫)
قَالَ اِنۡ سَاَلۡتُکَ عَنۡ شَیۡءٍۭ بَعۡدَهَا فَلَا تُصٰحِبۡنِیۡ ۚ قَدۡ بَلَغۡتَ مِنۡ لَّدُنِّیۡ عُذۡرًا
মুসা বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে সাথে রাখবেন না। আপনি আমার পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত হয়ে গেছেন।' (সুরা কাহফ: আয়াত ৭৬)
এবার যদি প্রশ্ন করি তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে নেওয়ার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করবেন; তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। যেহেতু এ ব্যাপারে তখন আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য অজুহাত থাকবে।
সুরা কাহফ : (৭৫-১১০)
কোরআনুল কারিমের ১৬ পাড়ার শুরুতেই আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত খিজির আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যা সুরা কাহফের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে। তা আজকের তারাবিতে তিলাওয়াত করা হবে।
পরের আয়াতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত খিজির আলাইহিস সালামের কথপোকথন ও ঘটনার বর্ণনা করা হয় এভাবে-
فَانۡطَلَقَا ٝ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَیَاۤ اَهۡلَ قَرۡیَۃِۣ اسۡتَطۡعَمَاۤ اَهۡلَهَا فَاَبَوۡا اَنۡ یُّضَیِّفُوۡهُمَا فَوَجَدَا فِیۡهَا جِدَارًا یُّرِیۡدُ اَنۡ یَّنۡقَضَّ فَاَقَامَهٗ ؕ قَالَ لَوۡ شِئۡتَ لَتَّخَذۡتَ عَلَیۡهِ اَجۡرًا
‘অতপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা তাদের অতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতপর তারা সেখানে একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, সেটি তিনি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মুসা বললেন, পনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন।' (সুরা কাহফ: আয়াত ৭৭)
এবার হজরত খিজির আলাইহিস সালাম তার যাত্রা স্থগিত করে মুসা আলাইহিস সালামকে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর বিবরণ তুলে ধরলেন-
قَالَ هٰذَا فِرَاقُ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنِکَ ۚ سَاُنَبِّئُکَ بِتَاۡوِیۡلِ مَا لَمۡ تَسۡتَطِعۡ عَّلَیۡهِ صَبۡرًا
তিনি বললেন, এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।' (সুরা কাহফ: আয়াত ৭৮)
নৌকা ছিদ্র করে দেয়া
اَمَّا السَّفِیۡنَۃُ فَکَانَتۡ لِمَسٰکِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ فِی الۡبَحۡرِ فَاَرَدۡتُّ اَنۡ اَعِیۡبَهَا وَ کَانَ وَرَآءَهُمۡ مَّلِکٌ یَّاۡخُذُ کُلَّ سَفِیۡنَۃٍ غَصۡبًا
নৌকাটির বিষয়টি হলো, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত (নষ্ট) করে দেই। (কেননা) তাদের অপরদিকে (নদীর ওপারে) ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি (ভালো) নৌকা ছিনিয়ে নিত।' (সুরা কাহফ: আয়াত ৭৯)
ছোট বাচ্চাকে মেরে ফেলার কারণ
وَ اَمَّا الۡغُلٰمُ فَکَانَ اَبَوٰهُ مُؤۡمِنَیۡنِ فَخَشِیۡنَاۤ اَنۡ یُّرۡهِقَهُمَا طُغۡیَانًا وَّ کُفۡرًا فَاَرَدۡنَاۤ اَنۡ یُّبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَیۡرًا مِّنۡهُ زَکٰوۃً وَّ اَقۡرَبَ رُحۡمًا
‘বালকের বিষয়টি হলো, তার বাবা-মা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে (বড় হয়ে) অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে। তারপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮০-৮১)
হাদিসে পাকে এসেছে, ‘যে বালককে খাদির আলাইহিস সালাম হত্যা করেছিলেন, সে কাফের হিসেবে লেখা হয়েছিল। যদি বড় হওয়ার সুযোগ পেত তবে বাবা-মাকে কুফরি ও সীমালংঘনের মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে ছাড়ত।’ (মুসলিম ২৬৬১)
প্রাচীর সোজা করে দেওয়ার কারণ
وَ اَمَّا الۡجِدَارُ فَکَانَ لِغُلٰمَیۡنِ یَتِیۡمَیۡنِ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ وَ کَانَ تَحۡتَهٗ کَنۡزٌ لَّهُمَا وَ کَانَ اَبُوۡهُمَا صَالِحًا ۚ فَاَرَادَ رَبُّکَ اَنۡ یَّبۡلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَ یَسۡتَخۡرِجَا کَنۡزَهُمَا ٭ۖ رَحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ ۚ وَ مَا فَعَلۡتُهٗ عَنۡ اَمۡرِیۡ ؕ ذٰلِکَ تَاۡوِیۡلُ مَا لَمۡ تَسۡطِعۡ عَّلَیۡهِ صَبۡرًا
প্রাচীরের বিষয়টি হলো, সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের (বাবার রেখে যাওয়া) গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশত ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮২)
এখানে আল্লাহ তাআলা সে প্রাচীরের নীচে খনি আছে বলেছেন। এর অতিরিক্ত কোনো তাফরির করেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও সহিহ কোনো তাফসীর বর্ণিত হয়নি। তাই এ ব্যাপারে সঠিক কোন মতামত দেয়া যায় না। তবে হজরত কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে গচ্ছিত খনি বলতে সম্পদ বোঝানো হয়েছে। আর আয়াতের ভাষ্য থেকেও এ অর্থই বেশি সুস্পষ্ট। (তাবারি)
এ আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, হজরত খাদির (খিজির) আলাইহিস সালামের মাধ্যমে এতিম বালকদের জন্য রক্ষিত গুপ্তধনের হেফাজত এজন্য করানো হয় যে, তাদের বাবা একজন সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাই আল্লাহ তাআলা তার সন্তান-সন্ততির উপকারার্থে এ ব্যবস্থা করেন। (ইবনে কাসির)
ন্যয়পরায়ন বাদশাহ জুলকারনাইনের পরিচয় বর্ণনা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নবুয়তের সত্যতায় বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবিকে বাদশাহ জুলকারনাইনের কিছু বর্ণনা দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ قُلۡ سَاَتۡلُوۡا عَلَیۡکُمۡ مِّنۡهُ ذِکۡرًا
'তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৩)
যুলকারনাইন কে ছিলেন? কোন যুগে ও কোন দেশে ছিলেন? এবং তার নাম যুলকারনাইন হল কেন? যুলকারনাইন নামকরণের হেতু সম্পর্কে বহু উক্তি ও তীব্র মতভেদ পরিদৃষ্ট হয়। কেউ বলেন, তার মাথার চুলে দুটি গুচ্ছ ছিল। তাই যুলকারনাইন (দুই গুচ্ছওয়ালা) আখ্যায়িত হয়েছেন।
কেউ বলেন, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যদেশসমূহ জয় করার কারণে যুলকারনাইন খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। কেউ এমনও বলেছেন যে, তার মাথায় শিং-এর অনুরূপ দুটি চিহ্ন ছিল। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তার মাথার দুই দিকে দুটি ক্ষতচিহ্ন ছিল। (ইবনে কাসির, ফাতহুল কাদির)
তবে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যুলকারনাইন নবি বা ফেরশতা ছিলেন না, একজন নেক বান্দা ছিলেন। আল্লাহকে তিনি ভালোবেসেছিলেন, আল্লাহও তাকে ভালোবেসেছিলেন।
আল্লাহর হকের ব্যাপারে অতিশয় সাবধানী ছিলেন, আল্লাহও তার কল্যাণ চেয়েছেন। তাকে তার জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। তারা তার কপালে মারতে মারতে তাকে হত্যা করল। আল্লাহ তাকে আবার জীবিত করলেন, এজন্য তার নাম হল যুলকারনাইন।’ (মুখতারা ৫৫৫, ফাতহুল বারী ৬/৩৮৩)
যুলকারনাইনের ঘটনা সম্পর্কে কোরআনুল করীম যা বর্ণনা করেছে, তা এই যে, তিনি একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যদেশসমূহ জয় করেছিলেন। এসব দেশে তিনি সুবিচার ও ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বপ্রকার সাজ-সরঞ্জাম দান করা হয়েছিল। তিনি দিগ্বিজয়ে বের হয়ে পৃথিবীর তিন প্রান্তে পৌছেছিলেন- পাশ্চাত্যের শেষ প্রান্তে, প্রাচ্যের শেষ প্রান্তে এবং উত্তরে উভয় পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত।
اِنَّا مَکَّنَّا لَهٗ فِی الۡاَرۡضِ وَ اٰتَیۡنٰهُ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ سَبَبًا فَاَتۡبَعَ سَبَبًا
‘আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৪-৮৫)
আল্লাহ তাআলা বাদশাহ যুলকারনাইনকে দেশ বিজয়েরই জন্য সে যুগে যেসব বিষয় (জিনিস) প্রয়োজনীয় ছিল, তা সবই দান করেছিলেন। যার দ্বারা সে দেশসমূহ জয় করে। শত্রুদের অহংকার মাটিতে মিশিয়ে দেয় এবং অত্যাচারী বাদশাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে।
বাদশাহ যুলকারনাইন আল্লাহ প্রদত্ত মাধ্যম থেকে অতিরিক্ত আরও কিছু মাধ্যম প্রস্তুত করল; যেমন আল্লাহর সৃষ্টি লোহা দিয়ে নানান রকমের অস্ত্র-শস্ত্র ও যন্ত্র তৈরি করা হয় এবং যেভাবে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে বিভিন্ন জিনিস-পত্র তৈরি করা হয়।
حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ مَغۡرِبَ الشَّمۡسِ وَجَدَهَا تَغۡرُبُ فِیۡ عَیۡنٍ حَمِئَۃٍ وَّ وَجَدَ عِنۡدَهَا قَوۡمًا ۬ؕ قُلۡنَا یٰذَا الۡقَرۡنَیۡنِ اِمَّاۤ اَنۡ تُعَذِّبَ وَ اِمَّاۤ اَنۡ تَتَّخِذَ فِیۡهِمۡ حُسۡنًا
'অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌঁছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।' (সুরা কাহফ: আয়াত ৮৬)
কোন কোন মুফাস্সির বলেন, তিনি পশ্চিম দিকে দেশের পর দেশ জয় করতে করতে স্থলভাগের শেষ সীমানায় পৌঁছে যান, এরপর ছিল সমুদ্র। এটিই হচ্ছে সূর্যাস্তের সীমানার অর্থ। হাবিব ইবন হাম্মায বলেন, ‘আমি আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বসা ছিলাম।
এমতাবস্থায় এক লোক তাকে জিজ্ঞাসা করল যে, যুলকারনাইন কিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যদেশে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল? তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আকাশের মেঘকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন করেছিলেন। পর্যাপ্ত উপায়-উপকরণ দিয়েছিলেন।
এবং প্রচুর শক্তি-সামৰ্থ দান করেছিলেন। তারপর আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আরও বলব? লোকটি চুপ করলে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুও চুপ করে যান।’ (আল-মুখতারাহ ৪০৯, ইবনে কাসির)
قَالَ اَمَّا مَنۡ ظَلَمَ فَسَوۡفَ نُعَذِّبُهٗ ثُمَّ یُرَدُّ اِلٰی رَبِّهٖ فَیُعَذِّبُهٗ عَذَابًا نُّکۡرًا وَ اَمَّا مَنۡ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَۨ الۡحُسۡنٰی ۚ وَ سَنَقُوۡلُ لَهٗ مِنۡ اَمۡرِنَا یُسۡرًا ‘সে বলল, ‘যে ব্যক্তি জুলুম করবে, আমি অচিরেই তাকে শাস্তি দেব। এরপর তাকে তার রবের কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তখন তিনি তাকে কঠিন আজাব দেবেন।
আর যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেব।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৭-৮৮)
ইয়াযুয-মাযুযের পরিচয় বর্ণনা
قَالُوۡا یٰذَاالۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَ مَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَهَلۡ نَجۡعَلُ لَکَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَهُمۡ سَدًّا
'তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৯৪)
ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনা থেকে এতটুকু নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, ইয়াজুজ-মাজুজ মানব সম্প্রদায়ভুক্ত। অন্যান্য মানবের মত তারাও নূহ আলাইহিস সালামের সন্তান-সন্ততি। কোরআনুল করীম স্পষ্টতঃই বলেছে- وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِينَ (সুরা আস-সাফফাত: আয়াত ৭৭)
অর্থাৎ হজরত নুহ আলাইহিস সালামের মহাপ্লাবনের পর দুনিয়াতে যত মানুষ আছে এবং থাকবে, তারা সবাই নূহ আলাইহিস সালাম-এর সন্তান-সন্ততি হবে। ঐতিহাসিক বর্ণনা এব্যাপারে একমত যে, তারা ইয়াফেসের বংশধর।’ (মুসনাদে আহমাদ ৫/১১)
তাদের অবশিষ্ট অবস্থা সম্পর্কে সর্বাধিক বিস্তারিত ও বিশুদ্ধ হাদিস হচ্ছে হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসটি। সেখানে দাজ্জালের ঘটনা ও তার ধ্বংসের কথা বিস্তারিত বর্ণনার পর বলা হয়েছে-
‘এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করবেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এমন লোক বের করব, যাদের মোকাবেলা করার শক্তি কারো নেই। কাজেই (হে ঈসা!) আপনি মুসলিমদের সমবেত করে তুর পর্বতে চলে যান।
(সে মতে তিনি তাই করবেন।) এরপর আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ-মাজুজের রাস্তা খুলে দেবেন। তাদের দ্রুত চলার কারণে মনে হবে যেন উপর থেকে পিছলে নীচে এসে পড়ছে।
তাদের প্রথম দলটি তবরিয়া উপসাগরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তার পানি পান করে এমন অবস্থা করে দেবে যে, দ্বিতীয় দলটি এসে সেখানে কোনদিন পানি ছিল, একথা বিশ্বাস করতে পারবে না।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীরা তুর পর্বতে আশ্রয় নেবেন। অন্যান্য মুসলিমরা নিজ নিজ দূর্গে ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেবে। পানাহারের বস্তুসামগ্ৰী সঙ্গে থাকবে, কিন্তু তাতে ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে একটি গরুর মস্তককে একশ দীনারের চাইতে উত্তম মনে করা হবে।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য মুসলিমরা কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। (আল্লাহ দোআ কবুল করবেন) তিনি মহামারী আকারে রোগব্যাধি পাঠাবেন। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই ইয়াজুজ-মাজুজের গোষ্ঠী সবাই মরে যাবে।
এরপর হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম সঙ্গীদেরকে নিয়ে তুর পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে দেখবেন পৃথিবীতে তাদের মৃতদেহ থেকে অর্ধহাত পরিমিত স্থানও খালি নেই এবং (মৃতদেহ পচে) অসহ্য দুৰ্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
(এ অবস্থা দেখে পুনরায়) হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। (যেন এই বিপদও দূর করে দেওয়া হয়)। আল্লাহ তাআলা এ দোয়াও কবুল করবেন এবং বিরাটাকার পাখি প্রেরণ করবেন, যাদের ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের মত।
(তারা মৃতদেহগুলো উঠিয়ে যেখানে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, সেখানে ফেলে দেবে)।
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, মৃতদেহগুলো সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। এরপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কোন নগর ও বন্দর এ বৃষ্টি থেকে বাদ থাকবে না। ফলে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ ধৌত হয়ে কাঁচের মত পরিস্কার হয়ে যাবে।
এরপর আল্লাহ তাআলা ভূপৃষ্ঠকে আদেশ করবেন, তোমার পেটের সমুদয় ফল-ফুল উদগীরণ করে দাও এবং নতুনভাবে তোমার বরকতসমূহ প্ৰকাশ কর। (ফলে তাই হবে এবং এমন বরকত প্রকাশিত হবে যে) একটি ডালিম একদল লোকের আহারের জন্য যথেষ্ট হবে এবং মানুষ তার ছাল দ্বারা ছাতা তৈরী করে ছায়া লাভ করবে।
দুধে এত বরকত হবে যে, একটি উষ্ট্রীর দুধ একদল লোকের জন্য, একটি গাভীর দুধ এক গোত্রের জন্য এবং একটি ছাগলের দুধ একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। (চল্লিশ বছর যাবত এই অসাধারণ বরকত ও শান্তি-শৃংখলা অব্যাহত থাকার পর যখন কেয়ামতের সময় সমাগত হবে; তখন)
আল্লাহ তাআলা একটি মনোরম বায়ু প্রবাহিত করবেন। এর পরশে সব মুসলিমের বগলের নীচে বিশেষ এক প্রকার রোগ দেখা দেবে এবং সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হবে; শুধু কাফের ও দুষ্ট লোকেরাই অবশিষ্ট থেকে যাবে। তারা ভূ-পৃষ্ঠে জন্তু-জানোয়ারের মত খোলাখুলিই অপকর্ম করবে। তাদের উপরই কেয়ামত আসবে।’ (মুসলিম ২৯৩৭)
হজরত আব্দুর রহমান ইবনে ইয়ায়িদের বর্ণনায় ইয়াজুজ-মাজুজের কাহিনীর আরও অধিক বিবরণ পাওয়া যায়। তাতে রয়েছেঃ তবরিয়া উপসাগর অতিক্রম করার পর ইয়াজুজ-মাজুজ বায়তুল মোকাদ্দাস সংলগ্ন পাহাড় জাবালুল-খমরে আরোহণ করে ঘোষণা করবে-
‘আমরা পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীকে হত্যা করেছি। এখন আকাশের অধিবাসীদের খতম করার পালা। সেমতে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহর আদেশে সে তীর রক্তরঞ্জিত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসবে। (যাতে বোকারা এই ভেবে আনন্দিত হবে যে, আকাশের অধিবাসীরাও শেষ হয়ে গেছে।) (মুসলিম ২৯৩৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে বলবেন, ‘আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য থেকে জাহান্নামীদেরকে তুলে আনুন। তিনি বলবেন,
‘হে আমার রব! তারা কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরান্নব্বই জন জাহান্নামী এবং মাত্র একজন জান্নাতি ৷ একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম শিউরে উঠলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে সে একজন জান্নাতি কে হবে?
তিনি উত্তরে বললেন, চিন্তা করো না। তোমাদের মধ্য থেকে এক এবং ইয়াজুজ-মাজুজের মধ্য থেকে এক হাজারের হিসাবে হবে।’ (মুসলিম ২২২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন যে, ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাবের পরও বাইতুল্লাহর হজ ও ওমরাহ অব্যাহত থাকবে।’ (বুখারি ১৪৯০)
তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ঘুম থেকে এমন অবস্থায় জেগে উঠলেন যে, তার মুখমণ্ডল ছিল রক্তিমাভ এবং মুখে এই বাক্য উচ্চারিত হচ্ছিল-
‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আরবদের ধ্বংস নিকটবর্তী! আজ ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীরে এতটুকু ছিদ্র হয়ে গেছে। এরপর তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী মিলিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখান। হজরত যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
আমি এ কথা শুনে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ লোক জীবিত থাকতেও কি ধ্বংস হয়ে যাবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, ধ্বংস হতে পারে; যদি অনাচারের আধিক্য হয় ৷’ (বুখারি ৩৩৪৬, মুসলিম ২৮৮০)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ইয়াজুজ-মাজুজ প্রত্যেহ যুলকারনাইনের দেয়ালটি খুঁড়তে থাকে। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা এ লৌহ-প্রাচীরের প্রান্ত সীমার এত কাছাকাছি পৌছে যায় যে, অপরপাশ্বের আলো দেখা যেতে থাকে।
কিন্তু তারা একথা বলে ফিরে যায় যে, বাকী অংশটুকু আগামীকাল খুঁড়ব। কিন্তু আল্লাহ তাআলা প্রাচীরটিকে আগের মতো মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে নেন। পরের দিন ইয়াজুজ-মাজুজ প্রাচীর খননে নতুনভাবে আত্মনিয়োগ করে।
খননকার্যে আত্মনিয়োগ ও আল্লাহ তাআলা থেকে মেরামতের এ ধারা ততদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যতদিন ইয়াজুজ-মাজুজকে বন্ধ রাখা আল্লাহর ইচ্ছা রয়েছে। যেদিন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মুক্ত করার ইচ্ছা করবেন, সেদিন ওরা মেহনত শেষে বলবে,
আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা আগামীকাল অবশিষ্ট অংশটুকু খুঁড়ে ওপারে চলে যাব। (আল্লাহর নাম ও তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভর করার কারণে সেদিন ওদের তাওফিক হয়ে যাবে।)
পরের দিন তারা প্রাচীরের অবশিষ্ট অংশকে তেমনি অবস্থায় পাবে এবং তারা সেটুকু খুঁড়েই প্রাচীর ভেদ করে ফেলবে।’ (তিরমিজি ৩১৫৩, ইবনে মাজাহ ৪১৯৯, মুস্তাদরাকে হাকেম ৪/৪৮৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৫১০, ৫১১)
আল্লামা ইবনে কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘হাদিসের উদ্দেশ্য এই যে, ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর খনন করার কাজটি তখন শুরু হবে, যখন তাদের আবির্ভাবের সময় নিকটবর্তী হবে। কোরআনে বলা হয়েছে যে, এই প্রাচীর ছিদ্র করা যাবে না।
এটা তখনকার অবস্থা, যখন যুলকারনাইন প্রাচীরটি নির্মাণ করেছিলেন। কাজেই এতে কোনো বৈপরীত্য নেই। তাছাড়া কোরআনে তারা ছিদ্র পুরোপুরি করতে পারছে না বলা হয়েছে, যা হাদিসের ভাষ্যের বিপরীত নয়।
বাদশাহ জুলকারনাইন কর্তৃক নির্মিত প্রাচীরের বর্ণনা
قَالَ مَا مَکَّنِّیۡ فِیۡهِ رَبِّیۡ خَیۡرٌ فَاَعِیۡنُوۡنِیۡ بِقُوَّۃٍ اَجۡعَلۡ بَیۡنَکُمۡ وَ بَیۡنَهُمۡ رَدۡمًا اٰتُوۡنِیۡ زُبَرَ الۡحَدِیۡدِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا سَاوٰی بَیۡنَ الصَّدَفَیۡنِ قَالَ انۡفُخُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَعَلَهٗ نَارًا ۙ قَالَ اٰتُوۡنِیۡۤ اُفۡرِغۡ عَلَیۡهِ قِطۡرًا فَمَا اسۡطَاعُوۡۤا اَنۡ یَّظۡهَرُوۡهُ وَ مَا اسۡتَطَاعُوۡا لَهٗ نَقۡبًا
'তিনি বললেন, আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ? দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও।
অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।
অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না।' (সুরা কাহফ : ৯৫-৯৭)
লোহার পাতকে খুব গরম করে ওর উপর গলিত সীসা বা লোহা বা তামা ঢেলে দেওয়ায় সেই পাহাড়ী রাস্তার মাঝের প্রাচীর এত মজবুত হয়ে গেল যে, ইয়াজুজ-মাজুজের পক্ষে তা ভেঙ্গে অন্যান্য মানুষের বসতিতে আসা অসম্ভব হয়ে গেল।
সুরার শেষ আয়াতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে নির্দেশ করেন যে, মানুষ যেন ভালো কাজ করার পাশাপাশি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
'(হে রাসুল! আপনি) বলুন আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)
সুরা মারইয়াম (১-৯৮)
সুরা কাহফের মতো এ সুরাটিতেও অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা ও বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত হয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই এ সুরাটিকে সুরা কাহফ-এর পরে স্থান দেয়া হয়েছে।
এ সুরাটিও তাওহিদের প্রতি বিশ্বাসের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। যা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষী। এ সুরায় আলোচিত বিষয়ের সূচিসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
দোয়ার আদবের বিশেষ শিক্ষা; হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম যেভাবে আল্লাহর নিকট পুত্র সন্তানের আবেদন করেছিলেন। 'যখন সে তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করেছিল নিভৃতে। সে বলল-
رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا
হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবন ত হয়েছে; বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফল মনোরথ হইনি।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৩-৪)
এ সুরায় হজরত মারইয়াম-এর সন্তান জন্মদানের বিষয়টিও ওঠে এসেছে। হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম মায়ের সতীত্ব ও পবিত্রতার কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন-
‘এরপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে হারূণ-ভাগ্নি! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। অতপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন।
তারা বলল, যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? সন্তান বলল, আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবি করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন।
তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে। আর জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৭- ৩৩)
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সত্যের আহ্বানের বর্ণনাও উঠে এসেছে-
وَ اذۡکُرۡ فِی الۡکِتٰبِ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ؕ اِنَّهٗ کَانَ صِدِّیۡقًا نَّبِیًّا اِذۡ قَالَ لِاَبِیۡهِ یٰۤاَبَتِ لِمَ تَعۡبُدُ مَا لَا یَسۡمَعُ وَ لَا یُبۡصِرُ وَ لَا یُغۡنِیۡ عَنۡکَ شَیۡئًا
'আপনি এই কিতাবে ইব্রাহীমের কথা বর্ণনা করুন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবী। যখন তিনি তার পিতাকে বললেন, হে আমার পিতা, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না, তার ইবাদত কেন কর?' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪১-৪২)
'হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা তোমার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব। হে আমার পিতা, শয়তানের ইবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য।
হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৩-৪৫)
قَالَ اَرَاغِبٌ اَنۡتَ عَنۡ اٰلِهَتِیۡ یٰۤـاِبۡرٰهِیۡمُ ۚ لَئِنۡ لَّمۡ تَنۡتَهِ لَاَرۡجُمَنَّکَ وَ اهۡجُرۡنِیۡ مَلِیًّا
'পিতা বলল, যে ইবরাহমি, তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৬)
'ইবরাহিম বললেন, তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান। আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতিত যাদের ইবাদত কর তাদেরকে;
আমি আমার পালনকর্তার ইবাদত করব। আশা করি, আমার পালনকর্তার ইবাদত করে আমি বঞ্চিত হব না। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৭-৪৮)
فَلَمَّا اعۡتَزَلَهُمۡ وَ مَا یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ۙ وَهَبۡنَا لَهٗۤ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ ؕ وَ کُلًّا جَعَلۡنَا نَبِیًّا
'অতপর তিনি যখন তাদেরকে এবং তার আল্লাহ ব্যতিত যাদের ইবাদত করত, তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করলেন, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৯)
আল্লাহ তাআলা ফরহেজগার বান্দার জন্য সেরা নেয়ামত জান্নাত তৈরি করেছেন। ফরহেজগার হওয়ার সেরা ইবাদত হলো রমজানের রোজা পালন। আজ ফরহেজগারদের শুনানো হবে সে নেয়ামতের কথা। আল্লাহ বলেন-
‘তাদের স্থায়ী বসবাস হবে যার ওয়াদা দয়াময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন। অবশ্যই তাঁর ওয়াদার তারা পৌঁছাবে।তারা সেখানে সালাম ব্যতীত কোন অসার কথাবার্তা শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্য া তাদের জন্যে রুযী থাকবে।
এটা ঐ জান্নাত যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে পরহেযগারদেরকে।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৬১-৬৩)
সুরা ত্বাহা (১-১৩৫)
এ সুরায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে আল্লাহর কথপোকথন ও তাঁর নবুয়তের বিস্তারিত বর্ণনা ওঠে এসেছে। এ সুরাটি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিরও দুই হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে পাঠ করে শোনান।
যে সুরার তিলাওয়াত শ্রবণ করে বিশ্বনবিকে হত্যা করতে এসে হজরত ওমর বিশ্বনবির চরণতলে লুটিয়ে পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সুরাও বিশ্বনবির নবুয়তের প্রমাণ। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচ্য সূচি তুলে ধরা হলো-
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার শব্দযুক্ত কথা চর্তুদিক থেকে প্রত্যক্ষভাবে শ্রবণ করেছিলেন। তার নবুয়ত লাভে ঘটনা ওঠে এসেছে এ সুরায়; যে স্থানে হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে জুতা খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তার বর্ণনা। আল্লাহ বলেন-
'তিনি যখন আগুন দেখলেন, তখন পরিবারবর্গকে বললেন তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু আগুন জালিয়ে আনতে পারব অথবা আগুনে পৌছে পথের সন্ধান পাব।
অতপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা, আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ। আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক।
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।' (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১০-১৪)
মুসা আলাইহিস সালামকে লাঠির মুজিজা দান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
‘হে মূসা, তোমার ডানহাতে ওটা কি? তিনি বললেন, এটা আমার লাঠি, আমি এর উপর ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য কাজ ও চলে।' (সুরা ত্বাহা ১৭-১৮)
'আল্লাহ বললেন, হে মুসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর। অতপর তিনি তা নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল আল্লাহ বললেন, তুমি তাকে ধর এবং ভয় করো না, আমি এখনি একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব। (সুরা ত্বাহা ১৯-২১)
'তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোন দোষ ছাড়াই। এটা এজন্যে যে, আমি আমার বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু তোমাকে দেখাই। ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে। (সুরা ত্বাহা ২২-২৪)
হজরত মুসা আলাইহস সালামের দোয়া। জ্ঞান বৃদ্ধিতে যে দোয়া পড়ে মুমিন মুসলমান। আল্লাহ তাআলার শেখানো দোয়াটি হলো-
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي - وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي - يَفْقَهُوا قَوْلِي - وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي
উচ্চারণ : রাব্বিশ রাহলি সাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি ওয়াঝআললি ওয়াঝিরামমিন আহলি'
অর্থ : 'হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ২৫-২৯)
এ সুরায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের পর তাকে ফেরাউনের হাত রক্ষায় মুসা আলাইহিস সালামের আল্লাহর নির্দেশ সিন্দুকে ভরে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। আবার ফেরাউনের ঘরেই মায়ের স্নেহে লালিত-পালিত হন মুসা আলাইহিস সালাম। যা পড়া হবে আজকের তারাবিহতে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
'যখন আমি তোমার মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা অতঃপর বর্ণিত হচ্ছে। যে, তুমি (মূসাকে) সিন্দুকে রাখ, অতঃপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, অতঃপর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেবে।
তাকে আমার শক্র ও তার শক্র উঠিয়ে নেবে। আমি তোমার প্রতি মহব্বত সঞ্চারিত করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ থেকে, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতি পালিত হও। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৩৮-৩৯)
' যখন তোমার ভগিনী এসে বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব কে তাকে লালন পালন করবে। অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মাতার কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং দুঃখ না পায়।
তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, অতঃপর আমি তোমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেই; আমি তোমাকে অনেক পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ান বাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছিলে; হে মূসা, অতঃপর তুমি নির্ধারিত সময়ে এসেছ।' (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৪০)
এ সুরায় হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম ও ফেরাউনের সঙ্গে ঘটিত প্রায় কথাপোকথন ওঠে এসেছে। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজিজা দেখে মুসা আলাইহিস সালামের দাওয়াত গ্রহণ করে নেয় জাদুকররা।
এছাড়াও কোনো ব্যক্তিকে পদ-মর্যাদা দান করার মাপকাঠি কেমন হবে তার বর্ণনা; ফিরাউন পত্নী হজরত আছিয়ার প্রসঙ্গ; বনি ইসরাইলের মিসর ত্যাগ; গো-বাছুর তৈরিকারক সামেরির পরিচয়; স্ত্রী ভরণপোষণের দায়িত্ব এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয়তা;
শত্রুর আক্রমণ থেকে হিফাজত থাকার প্রসঙ্গ; দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে ধন-সম্পদের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গ; নামাজের জন্য নিকটতমদের প্রতি আদেশ প্রদান প্রসঙ্গ ওঠে এসেছে।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Conclusion: জুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজের গল্প শুধু ইসলামিক ইতিহাসই নয়, মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আজকের যুগে, আমরা যখন এই ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই, তখন এটি আমাদেরকে শিখায় যে, সভ্যতার উন্নতি এবং মানবজাতির সুরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।